গত শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ‘সাজিদুল ইসলাম বাপ্পির পদত্যাগ, নানা গুঞ্জন’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রতিবাদ ও ব্যাখ্যা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির সদস্য সচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি ।
ই-মেইলে পাঠানো ব্যাখ্যায় তিনি উল্লেখ করেন, গত ৫ ফেব্রুয়ারি গোটা দেশ ফুঁসে উঠলে বিএনপির কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল তার নির্বাচনী এলাকা খালিশপুর, দৌলতপুর এবং খানজাহান আলী এলাকার শৃঙ্খলা রক্ষার্থে কোনো বাড়ি ভাঙচুর না করার ব্যাপারে রিকুয়েষ্ট করেন। আমি তাৎক্ষণিকভাবে উক্ত এলাকার ছাত্র-জনতাকে শান্ত থাকতে রিকুয়েষ্ট করি। এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। আমার নিজের বাড়িও খানজাহান আলী থানা এলাকায় হওয়াও এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় আমি সর্বোচ্চ সচেষ্ট ছিলাম। ফলশ্রুতিতেই হয়তো সকল ভাঙচুর এড়াতে পেরেছি। এখানে আমার সাথে কোনো প্রকার আর্থিক লেনদেনের তথ্য পেলে সেগুলো জনসম্মুখে তুলে ধরুন। আর গত ৫ আগস্টের পর থেকে বা কস্মিনকালেও কোনো আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে হানা দেওয়ার কোনো সিঙ্গেল অভিযোগ থাকলে সেগুলোও নাম, ঠিকানাসহ প্রকাশ করুন।
সিএন্ডএফের সংশ্লিষ্টতা:
সিএন্ডএফ এর এ্যাডহক কমিটি গঠনের সময় আমাদের হাতে ২টি অপশন ছিল। একটি আওয়ামী লীগের বাগেরহাট জেলার অর্গানাইজেশন সেক্রেটারি ও বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্স এর সভাপতি, যে নিজ হাতে অক্টোবর ২৫ এ আমাদের শহীদের পোস্টার ছিড়ে ফেলেছে, ফ্যাসিস্ট এর প্রধান দোসর লিয়াকতের লোকদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেওয়া। অপরদিকে ছিলেন, গত ১৬ বছরে নির্যাতিত নিপীড়িত গ্রুপ। যারা শেখ বাড়ির নির্যাতনে গতবছরগুলোতে ব্যবসা বাণিজ্যও করতে পারেন নাই। আমরা ২ গ্রুপ থেকেই ফিল্টারিং করে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি। এব্যাপারে খুলনার অন্যান্য রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সাথেও একাধিকবার যোগাযোগ করে, সমন্বয় করে তবেই সিএন্ডএফ এ নির্বাচন আয়োজনের জন্য একটি এ্যাডহক কমিটি গঠনে সম্মত হন প্রকৃত ব্যবসায়ীরা। এখানে আমি কোনো অথরিটি না। আর আর্থিক লেনদেন এর কোনো প্রশ্নই উঠে না।
আমার সাথে চেম্বার অব কমার্সের সংশ্লিষ্টতা:
খুলনা চেম্বার অব কমার্স এ প্রকৃতপক্ষে গত ১৬ বছর কোনো কমিটি ছিল না। চেম্বার অব কমার্স নামক প্রতিষ্ঠানকে একদল লোক জোর করে জবরদখল করার মাধ্যমে তাদের টাকা কামানো আর প্রভাববিস্তারের মাধ্যমে পরিণত করে। খুলনা চেম্বার অব কমার্সকে কেন্দ্র করে খুলনা শহরের সকল সন্ত্রাস গড়ে উঠে। খুলনার সকল সন্ত্রাস, লুটেরা, মাদককারবারি, স্বর্ণ চোরাচালানকারীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয় খুলনা চেম্বার অব কমার্স। ফলশ্রুতিতে ওদের ক্ষমতার দাপটে খুলনার মানুষ সংস্কার চাইলেও চেম্বার অব কমার্স এর কমিটি ভেঙ্গে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির মুরোদ কারোর হয়নি। সেখানে সকল প্রকার হুমকি, ধামকি মোকাবেলা করে আমি চেম্বার অব কমার্সের কমিটি ভেঙ্গেছি। এখন সেখানে একজন এডিসি প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব পেয়েছেন। যিনি নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। তাহলে কে এখানে কমিটি ভাঙ্গার জন্য লেনদেন করবে? কে এখানে সুবিধাপ্রাপ্ত ? আমি তো নির্বাচন চেয়েছি। সেজন্যই একজন এডিসি দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন। এখানে কোনো ব্যাক্তি কি আদৌ সুবিধাপ্রাপ্ত হলেন?
খাদ্য অধিদপ্তর-
আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে স্বয়ং RC Food আমাদেরকে ১০ লক্ষ টাকা ঘুষ প্রদানের অফার করেন। সেখানে আরো অন্তত ১০/১২ জন উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে বিভাগীয় কমিশনারকে জানানো হয়। খাদ্য অধিদপ্তরসহ অন্যান্য সরকারি অফিস থেকে আমি কত টাকা চাঁদাবাজি করেছি এগুলো জনসম্মুখে প্রকাশ করুন।
মামলার ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায়-
কাউকে মামলার ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায়ের বিরুদ্ধে আমিই নিজেই অনেক বেশি সোচ্চার ছিলাম। লাস্ট কয়েকদিন আগে ফেসবুকেও পোস্ট করেছি। যদি আমি মামলার ভয় দেখিয়ে কারোর থেকে কোনো রূপ আর্থিক লেনদেন করে থাকি তবে প্রকাশ্যে আনুন। প্রকাশ করুন।
ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেন:
আমি কয়েকবছর আগে থেকেই সার্কেল ৪, কর অঞ্চল খুলনা এর আওতাধীন একজন করদাতা। কয়েকবছর আগে থেকেই আমার বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আমার টিন নম্বার পেতে ইনবক্স করুন। এবং পূর্ববর্তী বছরগুলোর সাথে লেনদেন মিলিয়ে দেখুন। অস্বাভাবিক লেনদেনের যেকোনো তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ করুন।
সাবেক এক বিএনপি নেতার ভাড়া করে দেওয়া অফিস ব্যবহার:
আমি কোনো ভাড়ায় অফিস ব্যবহার করি না এবং অতীতেও কখনো করি নাই। আমার বর্তমান অফিস নিজের পৈতৃক সম্পত্তির উপর নির্মিত।
খুলনা ক্লাব এবং নৌ-পরিবহন মালিকগ্রুপ:
খুলনা ক্লাব এবং নৌ-পরিবহন মালিক গ্রুপ সম্পর্কে আমি অবগত নই। আমি এসব জায়গায় কোনোদিনও যায় নাই এবং কোনোভাবে কানেক্টেডও নই।
খুলনা গেজেট এই নিউজের ব্যাপারে আমার কোনো বক্তব্য জানতে চাইনি। আমার বক্তব্য ছাড়াই তারা নিউজ করেছে। আমার সাথে যোগাযোগের কোনো চেষ্টা খুলনা গেজেট করেনি।
খুলনা গেজেটের প্রতি আহ্বান থাকবে, মনগড়া কথা না বলে উপযুক্ত তথ্য দিন, প্রমাণসহ সত্য প্রকাশ করুন। আমি মিথ্যা হলে আমায় পরিহার করুন।
প্রতিবেদকের বক্তব্য
পদত্যাগের বিষয়ের সত্যতা জানতে গত বুধবার রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে সাজিদুল ইসলাম বাপ্পীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। ক্ষুদে বার্তাও পাঠানো হয়েছিল। তিনি বার্তাটি দেখলেও কোনো উত্তর দেননি।
সরেজমিন পরিদর্শন, ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবাদের বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান শেষে শিগগিরই খুলনা গেজেট ব্যাখা প্রকাশ করবে।।